কক্সবাজার শহরের ত্রাস আশু আলী র্যাবের গুলিতে নিহত
আরিফুর রহমান,কক্সবাজারঃ
কক্সবাজার শহরের ত্রাস ভয়ংকর কিলার ও সন্ত্রাসী আশরাফ আলী ওরফে আশু আলী (২৭) র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। শনিবার (১৭ জুলাই) ভোরে শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের সাহিত্যিকা পল্লী বড়বিল মাঠে লাশটি দেখতে পায় স্থানীয়রা। সে বিজিবি ক্যাম্প ফরেস্ট অফিস পাড়ার জাফর আলমের ছেলে। সাহিত্যিকা পল্লী ও সমিতি বাজারের মাঝামাঝি আশু আলী বাহিনীর অভয়ারণ্য। তার বাহিনীর প্রধান আমির খান ২০১৯ সালে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। অবশেষে সেকেন্ড ইন কমান্ড আশরাফ আলী ওরফে আশু আলীও একই পথের পথিক হলো।
এখবরে স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। ২০১৭ সালে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী এলাকার শরাফত আলীর ছেলে আবদুল কাদের বাধা দিতে গিয়ে তার একটি হাত সন্ত্রাসীর ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসব ঘটনার হোতা ছিল আশরাফ আলী ওরফে আশু আলী। আর পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় আবদুল কাদেরকে। পরের বছর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজিবি ক্যাম্প ফরেস্ট অফিসের পেছনে কথা-কাটাকাটির জের ধরে আশরাফ আলী, আমির খান ও সরওয়াররা স্থানীয় মৃত আবদুল মোনাফের ছেলে বাদশার পা কেটে দেয়। ২০১৯ সালের দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায় শহরের শীর্ষ অপরাধী আমির খান।
২০২০ সালের জুলাইয়ের দিকে শহরের সাবমেরিন এলাকায় বোনের বাসা থেকে বাবুর্চি হেলালকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে আশু আলী। হেলাল উদ্দিন বিজিবি ক্যাম্প এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। এরপর একি বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে রাজমিস্ত্রি শফিউল্লাহকে কুপিয়ে হত্যা করে আশু আলী ও সাদ্দাম গ্যাং। শফিউল্লাহ বিজিবি ক্যাম্প এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে। ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর কক্সবাজার বাস টার্মিনাস্থল বিএডিসির খামার-সংলগ্ন সড়কে আশু আলীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন আনোয়ার হোছাইন। ঘটনার পরপরই আশু আলীর অন্যতম সহযোগী মৃত আবুল কালামের ছেলে সালমানসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
কিন্তু অধরা থাকে আশু আলী। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় মৃত মো. ইয়াছিনের ছেলে রুবেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে আশু আলী ও তার সক্রিয় সদস্যরা। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় দিনদুপুরে জান্নাতুল ফেরদৌস কেমি নামের এক কলেজছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে আহত করে তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করে চলে যায় আশু আলী বাহিনীর সদস্যরা। ২০২১ সালের জানুয়ারির দিকে বিজিবি ক্যাম্পের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির ধর্ম ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাবুকে গুলি করে হত্যা করে আশু আলী।
আশু আলীর উত্থান : কক্সবাজার শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম চৌধুরী পাড়ার ফরেস্ট অফিসের পেছনে জাফর আলমের ছেলে আশরাফ আলী ওরফে আশু আলী। বর্তমান বয়স প্রায় ২৪ বছর। ১৬ বছর বয়সে আমিন খান (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে চুরি-ছিনতাই শুরু করে সে। আমির খানের ছিল প্রায় ১২ জনের একটি ছিনতাইকারী গ্রুপ। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি একাধিক হত্যাকান্ডের হোতাও তারা।
পরে আমির খানের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবেও কাজ করত আশু আলী। কক্সবাজার শহরের বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত তাদের হাতে। গত তিন বছরে আশু আলীর হাতে খুন হন প্রায় পাঁচজন। ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া ডাকাতি, অপহরণ ও চাঁদা আদায় ঘটনা। বর্তমানে আশু আলীর গ্রুপে রয়েছে ৭ থেকে ৮ জন সন্ত্রাসী। তাদের আস্তানা : কক্সবাজার শহরের বিশাল একটি পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকা হলো রুমালিয়ারছড়ার সমিতি বাজার, সিকদার বাজার, কক্সবাজার জেল কারাগারের পেছনের এলাকা, পল্লানিয়া কাটা, আমতলী পাহাড়ি এলাকা, সাতিহিত্যিকা পল্লীর ভেতরে, বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিমে ও আলীর জাহান গরুর হালদা এলাকা। এসব পাহাড়ি এলাকায় আশু আলী ও সাদ্দাম গ্রুপের আস্তানা।
কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, তাদের গ্রেপ্তার করতে বেশ কয়েকবার অভিযানও চালানো হয়েছিল, কিন্তু দুর্গম এলাকা হওয়ায় সহজেই পালিয়ে যায় তারা। এলাকার চিহ্নিত কয়েক ব্যক্তি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আশরাফ আলী ওরফে আশু আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, অস্ত্র, ডাকাতি প্রস্তুতিসহ প্রায় ১২টি মামলা রয়েছে এবং সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ প্রায় ৯টি মামলা রয়েছে।