সোমবার , ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সন্ত্রাসী হামলায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৩ জন এবং কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার একজনসহ সারা দেশে এ পর্যন্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য।
রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে কোটা আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি চলাকালে এসব ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার এনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, ডিএমপির যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও থানা; টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানা; বগুড়ার সদর, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর থানা এবং নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি; জয়পুরহাট সদর থানা; কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা; রংপুরের গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া; ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানা; সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা; হবিগঞ্জের মাধবপুর ফাঁড়ি; ময়মনসিংহ রেঞ্জ অফিস; নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়; দিনাজপুর সদর থানায় আক্রমণ করেছে। আহত পুলিশ সদস্য তিন শতাধিক।
রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক সংবাদটুডে.কমকে জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে এনায়েতপুর থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা থানায় আগুন দেয় এবং সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করে।
এদিক হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খায়রুল আলম জানান, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হামলায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত কনস্টেবলের নাম মো. এরশাদ আলী।
তিনি আরও জানান, হঠাৎ করে আন্দোলকারীরা ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় আক্রমণ করে। এসময় পুলিশ সদস্যরা ছাদে উঠে যায়। কিন্তু এরশাদ আর উঠতে পারেননি। এসময় এরশাদকে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে তারা।
এ পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি করেছে সরকার। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ জুলাই থেকে সারা দেশে সহিংসতা-সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, এসময় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়। সহিংসতার মধ্যে গত ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সহিংসতা দমনে সরকার অভিযান চালালে গত ২২ জুলাই থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ক্রমে বাড়ে কারফিউ শিথিলের সময়।
গত বুধবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অর্থাৎ ১৩ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল ছিল। রোববার থেকে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা থেকে ১৫ ঘণ্টা শিথিল করা হয়।
কিন্তু এরমধ্যে শিক্ষার্থীরা পুলিশের গুলিতে নিহতদের বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আলোচনায় আসার আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবি আদায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে। এছাড়া আগামীকাল সোমবার লং মার্চ ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এদিকে বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে (১৯ জেলায়) ১০০ জন নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে ঢাকায় ৭ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, সিরাজগঞ্জে তের পুলিশ সদস্যসহ মোট ২৫ জন, বরিশালে ১ জন, ভোলায় ৩ জন নিহত, বগুড়ায় ৫ জন, জয়পুরহাটে ২ জন, ফেনীতে ৮ জন, কিশোরগঞ্জে ৫ জন, কুমিল্লায় ২ জন, নরসিংদীতে ৬ জন, সিলেটে ৫ জন, লক্ষ্মীপুরে ১১ জন, শেরপুরে ৩ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন ও ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ১ জন নিহত হয়েছেন।