শুক্রবার , ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সৌরভ মাহমুদ হারুন, বুড়িচংঃ
ভয়াবহ রূপদারন করেছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পাহাড়ি ঢলের পানি। গত ৩-৪ ধরে টানা বর্ষিত ভারী বৃষ্টি পাতে এবং ভারতের বাঁধ ছেড়ে দেয়ায় কুমিল্লার আদর্শ সদর, বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ায় গোমতীনদীর পানি ভয়ংকর রূপধারন করেছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে মানুষের। এখন গোমতীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রতি ঘন্টায় ১০-১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব তথ্য জানিয়েছে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান।
গোমতীর ক্রমশ পানি বৃদ্ধিতে গোমতীর প্রতিরক বাঁধের পাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
ইতিমধ্যে অনেকে অতিক ঝুঁকি পূর্ন এলাকার মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে ছুড়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন, জন প্রতিনিধি সরজমিনে জানাগেছে কুমিল্লার আদর্শ সদর, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার এ এলাকায় গোমতী নদীর পানি এবার টানা কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষনে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
অপর দিকে মঙ্গলবার রাতে ভারতের ত্রিপুরায় বাধ ছেড়ে দিলে পাহাড়ি ঢলে বৃষ্টির পানিতে গোমতী নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বুধবার ভোর থেকে গোমতী নদীর ঘোলাটে পানি বিপদসীমা ছুই ছুই ছিল আর বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩০-৪০ টি পয়েন্ট দিয়ে পানি ছুয়ে ছুয়ে বের হচ্ছে।
এতে করে করে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পাড়ের মানুষ অজানা ভয়ভীতিতে আন্তক গ্রস্থিত হয়ে গেছে। গোমতীর ভেতরে ইতি মধ্যে মানুষের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করে ডুবে গেছে। তারা বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে। ঢলের ও ভারী বর্ঘনের পানিতে মানুষের বিভিন্ন শাক সবজি, ধান নিম্নজিত হয়েছে।
গোমতী নদীর চানপুর, পালপাড়া, রত্নবতি, বানাশুয়া, আমতলী, বাবুর বাজার, খামার খাড়া, বালি খাড়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুড়া, মিথিলাপুর, শ্রীপুর, গোবিন্দ পুর, মালাপাড়া, মনেহরপুর, বৃষ্টিপুর, অলুয়া, কংশনগর, রামচন্দ্র পুর, কুসুম পুর, এদবারপুর, কাঠালিয়া, মীরপুর, কাচিয়াতলা, সহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পানি ছুয়ে ছুয়ে বের হচ্ছে।
এ সমস্ত স্থানে জন প্রতিনিধি উপজেলা প্রশাসন গর্তে বস্তায় মাটি ভরে মেরামত করছেন।
পীরযাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু তাহের জানান ক্রমাগত নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে বাধের বিভিন্ন স্থানে ফাটলে ও গর্ত দিয়ে পানি ছুয়ে ছুয়ে বের হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার সরজমিনে রিকভারি করেছেন। আমরা স্থানীয় লোকজন সঙ্গে নিয়ে সর্তক অবস্থানে আছি।
সোলনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন, গোমতীর পানি ঘন্টায় ঘন্টায় বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে মানুষ ও আতঙ্কিত হয়ে আছে। প্রতিরক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থান দিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার উপস্থিত থেকে আমি সহ বস্তায় বালু ভরাট করে ফাটলে ফেলে পানি বন্ধ করি। বাবুর বাজার, ভালি খাড়া কামার খাড় মিথিলা পুর সহ কয়েক স্থানে আমরা কাজ করেছি। স্থানীয় লোকজন আমাদের কে সহযোগিতা করছেন।
অন্য দিকে বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয় বনিক জানান দুই উপজেলায় প্রায় ৯ হাজারোর উপর পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এতে ৫-৬ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজহারুল ইসলাম বলেন ব্রাহ্মনপাড়ায় গোমতী নদীর পানি বিপদ সীমানায় উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটি পয়েন্টে দিয়ে সমস্যা হচ্ছে সে গুলো আমরা চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্থানীয় লোকজন নিয়ে রিকভারি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বৃষ্টি পাতে প্রায় ২ শত পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মাইকিং করে তাদের বলা হয়েছে বিভিন্ন স্কুল কলেজে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠার জন্য। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন ফসলের জমি প্রায় সাড়ে ৯ শত হেক্টর পানিতে রোপা আমন, বীজতলা ও সাক সবজি তলিয়ে গেছে।
অপর বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানিয়েছেন ১৪-১৫ পয়েন্ট দিয়ে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধের স্থান দিয়ে পানি ছুয়ে ছুয়ে বের হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান , মেম্বার জন সাধারণ নিয়ে মাটি বস্তায় ভরে গর্তে ফেলে রিকভারি করা হচ্ছে।
পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত গ উপজেলায় বাড়ি ঘর ডুবার খবর পাওয়া যানি। তবে কিছু কিচ্ছু বাড়ির উঠান পর্যন্ত পানি উঠেছে। আমরা বিভিন্ন স্কুল কলেজে ৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। আমরা দূর্যোগের মুকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
অপরদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিনা আক্তার জানান অতি বর্ষন ভারী বৃষ্টি পাতে গোমতী নদীর চর সহ বিভিন্ন এলাকায় ৭-৮ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি)এর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বুধবার সন্ধ্যায় বলেন গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের যেখানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানে বালুর বস্তা দিয়ে প্রতিরোধ বা ভরাট করা হচ্ছে।
প্রতি ঘন্টায় ১০-১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে প্রতিরক্ষা বাঁধের মারাত্মক হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে।
তিনি নদীর পাড়ের মানুষ জন কে আতঙ্কিত না হয়ে সর্তক হওয়ার আহবান জানান। বাঁধের মধ্যে ফাটল বা ঝুঁকি আছে এমন পরিস্থিতি দেখলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানুর অনুরোধ করেন।