চাঁদপুরের স্বাভাবিক হচ্ছে জন জীবন
মানিক দাস, চাঁদপুরঃ
স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে চাঁদপুরের জনজীবন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগকে কেন্দ্র করে বিজয়োল্লাস হয় দেশজুড়েই।
গত কয়েক দিনের সহিংস ঘটনায় প্রাণহানি ও বিজয়োল্লাসের আড়ালে দুর্বৃত্তদের লুটপাট, অগ্নিসংযোগে স্থবির ও আতঙ্কিত হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের জনজীবন।বর্তমানে চাঁদপুর শহর জুরে আছে শুধু ডাকাত আতন্ক।
সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও এমন চিত্র দেখা যায়। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বাহিনী পুলিশ সদস্যরা মাঠে না থাকায় অরাজগত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
৫ আগস্ট বিজয়োল্লাসকালে বিকেলের পর থেকে দুর্বৃত্তরা শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।
দেশের সার্বিক দায়িত্ব নিয়ে ৬ আগস্ট থেকে সবকিছু স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেন সেনাবাহিনী প্রধান।
পরের দিন থেকে সড়কে ছিল না কোনো ট্রাফিক পুলিশ। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ছিলো নানা রকমের ক্ষতচিহ্ন। আগুনে পোড়ার বীভৎসতাও জানান দেয় মোটরসাইকেলসহ অনেক যানবাহন ও স্থাপনার ধ্বংসযজ্ঞ।
এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে আবারও মাঠে নামে ছাত্রসমাজ। যে কোনো সহিংসতা পরিহার করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে নেতা-কর্মীদের সতর্ক ও শান্ত থাকার আহ্বান জানান বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
গত পাঁচদিন ধরে ট্রাফিক পুলিশবিহীন ব্যস্ত চাঁদপুর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা সুচারুভাবে সামলাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা। টানা পাঁচদিন ধরে সড়কে ট্রাফিকের ভূমিকায় রয়েছেন শিক্ষার্থী, রোভার স্কাউটস, যুব রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের সদস্যরা। এর আগে তারা শহরে ক্ষত চিন্হ পরিষ্কার করছেন সমানতালে।
শহরের সৌন্দর্য ফেরাতে নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ। শহরের মূল সড়কের পাশের দেয়ালগুলোতে রঙ দিয়ে আঁকছেন নানা রকম দেয়ালচিত্র।
অনেকে সংখ্যালঘু পরিবার, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
এদিকে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করায় রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ নানা পরিবহন ও মানুষের চাপে এখন ব্যস্ত শহর চাঁদপুর । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও তা এখনও সরব হয়ে উঠেনি।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারকাজ। দোকানপাট, মার্কেট, বিপণী বিতান, কল কারখানা, মিল ফ্যাক্টরি খুলেছে যথানিয়মেই। চাঁদপুরে নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের পাইকারি বাজার, পুরাণবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গদিঘর খোলা রয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক গত মঙ্গলবার বিকেলে ব্যবসায়িক এলাকা পুরান বাজারে মিটিং করে নিশ্চিন্তে নির্দ্বিধায় দোকান খুলে বেচাকেনার কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এমন আশ্বাসে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পেয়েছেন বলে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের কয়েকজন জানিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের কড়াকড়ির কারণে রাস্তা দখল করতে দেখা যায়নি কোনো ক্ষুদ্র ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীকে।
পথচারীদেরও হাঁটতে হয়েছে নিয়ম করে ফুটপাত ধরে। শহরের প্রধান প্রধান বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগের মতোই খুলেছে।
গত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও তাণ্ডবময় পরিস্থিতিতে অনেকের মনেই চাপা আতঙ্ক বিরাজ করে। তবে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় মানুষের মধ্য থেকে আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল চলছে।
থানা,পুলিশ ফাঁড়ি, নৌ থানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি ভাবে শুরু করা যায়নি।
https://www.songbadtoday.com/?p=91892
Post Views: ৬৪