বুধবার , ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মানিক দাস, চাঁদপুরঃ
ইলিশের মৌসুমে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ মাছ আমদানি হচ্ছে। আমদানিকৃত এসব মাছ অনেক সময় নদীতে জেলেদের নৌকায় বেশ কয়েকদিন সংরক্ষণ করে রাখে।
বরফ ও মাছের চাপ এবং পরিবহনের সময়ও কিছু মাছ নরম হয়ে পচে যায়। আর এসব ইলিশ এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অল্প মূল্যে ক্রয় করে লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে থাকেন।
বর্তমানে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে শুরু হয়েছে নরম ও পচা ইলিশ লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ। লবন ইলিশ বা লোনা ইলিশ বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করছেন কোটি কোটি টাকা।
ইলিশের মৌসুম না থাকা এবং নদীতে ইলিশ না পাওয়া গেলে ওই সময়ে ব্যবসায়ীরা লোনা ইলিশ বিক্রি করেন। দেশের উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জেলায় এই মাছের চাহিদা ভালো থাকায় বেশ লাভবান ও হচ্ছেন তারা।
এদিকে লোনা ইলিশের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে চাঁদপুরের ইলিশের ডিম অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।
চাঁদপুর থেকে অনলাইন এবং চট্টগাম থেকে রফতানির মাধ্যমে দুবাই, সৌদি আরব, মালেশিয়া, ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ইলিশের ডিম রপ্তানি করা হয়। নরম ও পচে যাওয়া ইলিশের ডিম প্লাস্টিকের বক্সে করে সংরক্ষণ করা হয়।
আর বাক্সের ইলিশের ডিম বিভিন্ন জেলাসহ চলে যায় বিদেশে। প্রতি কেজি ইলিশের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৪ শ থেকে ১হাজার ৫ শ টাকায়।
শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ থেকে আসা লোনা ইলিশ পক্রিয়াজাত করণের শ্রমিক আলা উদ্দিন ও আবদুল মালেক বলেন, প্রথমেই ইলিশের পেট থেকে ডিম আলাদা করে ফেলে হয়। এরপর ইলিশ মাছটি ফালি ফালি করে কেটে ভালোভাবে লবন দেওয়া হয়। লবন দিয়ে ১০ / ১৫ দিন রেখে দেওয়া হয়। সবশেষ লবন মিশ্রিত পানির ড্রামে রেখে সংরক্ষণ করা হয়।
লোনা ইলিশ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিবছর ইলিশের মৌসুমে চাঁদপুরে চলে আসি। এই সময়ে ইলিশের আমদানি ভালো হয়। ঘাটে আসা নরম পচা ইলিশ কম দামে কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করি।
এভাবে সংরক্ষণ করে প্রায় একবছর পরেও এই ইলিশ বিক্রি করা যাবে। যখন ইলিশের আমদানি কম থাকে, তখন লোনা ইলিশ ৪০০-৫০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়। আর ইলিশ সৃজনে ২০০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
মূলত আমরা ননসৃজনে এসব লোনা ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকি। আর ইলিশের ডিমগুলো বক্সে করে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।
ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ সহ কিছু কিছু জেলায় এ লোনা ইলিশের চাহিদা প্রচুর।
তা ছাড়া এ সব এলার বিয়ের অনুষ্ঠানে লোনা ইলিশ ভোজনে দিতে হয়। যার জন্য আমরা ইলিশের সৃজনে চাঁদপুরে চলে আসি নিজস্ব লোকজন নিয়ে। এখানে মাস খানেক থেকে কম দামে পচা ইলিশ কিনে তা কেটে লবনজাত করে আমরা লোনা ইলিশ প্রক্রিয়াজাত করে থাকি। তারপর এ লোনা ইলিশ আমরা নিজস্ব এলাকায় নিয়ে আরো প্রক্রিয়াজাত করে বছর খানেক পর বিক্রি করবো।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের মৌসুমে হাজার হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়। ওই সময় কিছু মাছ নরম ও পচে যায়। আর সেই ইলিশ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কিনে লবন দিয়ে সংরক্ষণ করেন। লোনা ইলিশ বিদেশে রফতানি না হলেও ইলিশের ডিম বিদেশে রফতানি হয়ে থাকে। মূলত এখন দেশে ইলিশের ডিম প্রচুর চাহিদা থাকায় বিদেশে রফতানি কম হচ্ছে।