বুধবার , ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালান আনারুল (৪৮)। যাতায়াতের সময় আনারুলের লোলুপ চোখ পড়ে দরিদ্র কিশোরী হীরার ওপর। কৌশলে মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে প্রেম ভালোবাসা। পরে বিয়ের প্রস্তাব। আনারুলের মন ভোলানো কথায় রাজি হয়ে যায় হীরা। এরপর থেকে আড়ালে আবডালে শারীরিক সম্পর্ক। হীরা সন্তান সম্ভবা।
সম্মান বাঁচাতে বিয়ে করে নেওয়ার অনুরোধ করলেও টালবাহানা করে কথা রাখেনি প্রেমিক আনারুল। এরপর থেকে নিজের ভবিষ্যত, পরিবারের সম্মান, গর্ভে থাকা সন্তান, সব কিছু ভেবেই সন্তান জন্ম নেওয়ার এক ঘণ্টা পেরোনোর আগেই হাসপাতালের ডাস্টবিনে নবজাতককে ছুঁড়ে ফেলে পালিয়ে যান হীরা নামের কিশোরী মা।
গত ১৭ দিন আগে এসব ঘটনা ঘটে যায় লোকচক্ষুর আড়ালেই। ঘৃণার পাথর সরিয়ে আসল ভালোবাসার খোঁজে বেরিয়ে আসে সন্তান পাগল ওই কিশোরী মা। সন্তানকে ফিরে পেতে ছুটে আসেন আদালতে।
আজ মঙ্গলবার সাতক্ষীরা আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের কাছে অকপটে খুলে বলেন কিশোরী প্রেমের সব কাহিনী।
ঘটনা সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সদরের শাখরা কোমরপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আনারুলকে ঘিরেই। হীরা জানায়, আনারুলই ডাস্টবিনে ফেলে রাখা সন্তানের জন্মদাতা পিতা।
হীরা জানায়, মোটরসাইকেলে যাতায়াতের সময় আনারুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নিজের স্ত্রী থাকার কথা গোপন করে বিয়ের প্রলোভনে আনারুল তাকে ভোগ করে। এক পর্যায়ে সে (হীরা) অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিয়ের কথা বললেও আনারুল অস্বীকার করে। লোকলজ্জা ও গ্রামবাসীর ভয়ে হীরা পালিয়ে আশ্রয় নেয় তার বোনের বাড়িতে।
একপর্যায়ে হীরা বোনের সহায়তায় ভর্তি হয় সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে জন্ম নেয় পুত্র সন্তান। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে হীরা মোবাইলে আনারুলকে বলে বিয়ে না করলেও একটিবার অন্তত সন্তানটিকে দেখে যাওয়ার। আনারুল মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে বলে, আমি আসবো না, তোর পথ তুই দেখে নে…। হীরা জানায়, পথ না পেয়ে সন্তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যাই। নিজে বাঁচি, আর সমাজ বাঁচাই, পরিবারের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করি।
গত ১৭ দিন ধরে এসব কষ্ট চেপে রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। যা হয় হোক- সিদ্ধান্ত নেই বুকের ধন ফিরিয়ে আনব। সমাজ দিয়ে কি হবে। অবশেষে মাতৃত্বের কাছে হার মেনে আজ আদালতের মাধ্যমে নিজ সন্তানকে ফিরে পেতে আবেদন করি। হীরা আরো বলেন, বুধবার লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে মামলা করতে আদালতে যাবেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে শিশু কল্যাণ বোর্ড, সাতক্ষীরা সদর শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী এমন কিছু ব্যক্তির নাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পাঠান ভারপ্রাপ্ত বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের কাছে।
তিনি যখন আইনের মধ্য দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন, ঠিক তখনই ওই আদালতের কাছে একটি আবেদন আসে শিশুটির গর্ভধারিনী মাতা পরিচয়দানকারী নুর নাহার পারভীন ওরফে হীরার কাছ থেকে।
তিনি নিজেকে ফেলে দেওয়া ওই শিশুর মাতা পরিচয় দিয়ে আদালতকে লিখিতভাবে জানান, দেবহাটার পূর্ব কুলিয়া গ্রামের (হাল সাং- হাড়দ্দহা) আব্দুর রশিদের মেয়ে তিনি। হীরা সন্তানটিকে তার নিজ জিম্মায় নিতে চান। সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ, সাতক্ষীরার একটি প্রত্যায়নপত্র এবং নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও জমা দেন তিনি।
অবশেষে বিচারক শেখ মফিজুর রহমান তাঁর আদেশে উল্লেখ করেন, যেহেতু একজন মাতা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক, বিধায় তার কাছেই সন্তানটিকে দেওয়া কল্যাণকর ও সর্বোত্তম হবে। সে অনুযায়ী হীরার কোলেই ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন ১৭ দিন বয়সের ওই শিশুটিকে।
এদিকে হীরার কাছ থেকে পাওয়া আনারুলের ০১৭২৩-৩৭২০৫৩ ও ০১৭৩৩-১১০০৮৮ নম্বরে বার বার যোগাযোগ করেও ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।