বুধবার , ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি চট্টগ্রামঃ
গত ২ ফেব্রুয়ারী পটিয়ায় ডেমু ট্রেন উদ্বোধন করেন মাননীয় রেলমন্ত্রী। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে চলাচল করা ডেমু ট্রেনের টিকেট না পেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারী পটিয়া স্টেশনে অনেক যাত্রী ফেরৎ চলে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ ষ্টেশনে দায়িত্বে থাকা স্টেশন মাষ্টার ও সহকারী স্টেশন মাষ্টার ২ জনের কেউ স্টেশনে উপস্থিত ছিল না।
এ ঘটনায় এই দুইজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানায় যায়, সহকারী স্টেশন মাস্টার শামসুন নাহার কে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় দায়িত্বে থাকা স্টেশন মাষ্টার মাজহারুল ইসলামকে দিয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। এদিকে ঘটনার সময় অনুপস্থিত থাকা সত্বেও দন্ডিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেনে বরখাস্ত কর্মচারী শামসুন নাহার।
এবিষয়ে ৯ ফেব্রুয়ারী স্নেহাশীষ দাশগুপ্তে সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্টেশন মাস্টারকে নয় বরখাস্ত করা হয়েছে সহকারী স্টেশন মাস্টার কে। স্টেশন মাস্টারকে আপাদত শোকজ করা হয়েছে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত ও পটিয়া স্টেশন মাস্টার মাজহারুল ইসলাম একই সময় রেলওয়েতে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়ে স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত পরিবহন কর্মকর্তা পদে পৌঁছালেও মাজহারুল এখনও আছেন স্টেশন মাস্টারের দায়িত্বে। বরখাস্ত শামসুন নাহারের দাবী ৭ ফেব্রুয়ারী রাতে স্টেশনের দায়িত্ব শেষ করে বাড়ীতে চলে আসেন।
পরেরদিন ৮ ফেব্রুয়ারী সকালে মাজহারুলের দায়িত্ব থাকলেও তিনি উপস্থিত হননি ডিউটিতে। শামসুন নাহারের অভিযোগ, প্রতিটি স্টেশন মাস্টারের নির্দিষ্ট ১টি সরকারি সিম ও মোবাইল সেট থাকে, সরকারীভাবে দেওয়া সেই মোবাইল বা সিম কোনটাই তিনি ব্যবহার করেন না। নিয়ম অনুযায়ী ঐ রাতেও মোবাইলটি তার কাছে থাকার কথা, মোবাইলটি তিনি না নিয়ে, শামসুন নাহারের কাছে জোড় পূর্বক রেখে যান। পরেরদিন সকালে স্টেশনেও আসেনি মাজহারুল। সব মিলিয়ে ভোগান্তিতে পরে পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসা যাত্রীরা। শামসুন নাহার জানান, আমি স্টেশন মাস্টারকে ফোনটি বুঝিয়ে দিতে চাইলেও উনি সেটা কখণও নিতে চান না।
সবসময় এরিয়ে যান। আগে সমর বাবু নামে স্টেশন মাস্টার পদে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, উনি দিতে চাইলেও মাজহারুল ইসলাম নিতে চাইতেন না। বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্তে সঙ্গে তার পরিচয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স্নেহাশীষ আর আমি একই ব্যাচেই ছিলাম। উনি পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন, আর আমি আছি স্টেশন মাস্টারে দায়িত্বে। ওই দিনের ঘটনায় বিভাগীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাজহারুল ইসলাম বলেন, সহকারী স্টেশন মাস্টার শামসুন নাহার ডিউটিতে সময়মত আসতে পারেননি, তাই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমার ব্যাপারে কোন নিদের্শনা এখনও পাইনী।
দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও সহকারীর বরখাস্তের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনাকে বরখাস্ত করলো কেনো সেটা আমারও প্রশ্ন? সরকারি মোবাইল ফোন সঙ্গে না রাখার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনা হল, শুধু সিমটা না সঙ্গে একটা টেলিফোন সেটও আছে, সরকারি জিনিস আমি কিভাবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করব? ওই সেটটা তো আমাকে দেয়নি। এই দিকে এইসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত বলেন, ডিটিও হিসেবে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি, স্টেশন মাস্টার উপস্থিত ছিলেন না, তাই যাত্রীরা টিকেট নিতে পারেন নি।
এই জন্যে আমি স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছি। আর কাকে কি শাস্তি দিতে হয় সেটা আমি ভালো করে জানি। আমার চাকুরির বয়স ৩৮ বছর, আমি যখন এই বিষয়ে চার্জসিট দিব, তখন তাতে সবকিছু পরিষ্কার করে লেখা থাকবে। সহকারী স্টেশন মাস্টারের বরখাস্তের বিষয়ে তিনি বলেন, স্টেশনের যে টেলিফোন সেট, সেটা তার কাছে ছিল, তিনি টেলিফোন তার কাছে রাখতে পারেন না। এটা জঘন্য অপরাধ। আমার কাছে যাত্রী কল্যাণ থেকে অভিযোগ এসেছে। আমি নিজে তদন্ত করে ঐ ফোন সহকারী স্টেশন মাস্টারের বাড়ীতে থাকার তথ্য পেয়েছি।
স্টেশন মাস্টার মাজহারুল টেলিফোনের দায়িত্ব নিতে চান না এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টেলিফোন রাখতে চান না, এমনটা বলার সুযোগ নেই। আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।