বুধবার , ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
লাকসাম প্রতিনিধিঃ
প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে স্বামী এক বা একাধিক বিয়ের ঘটনা প্রায় শুনা যায়। এ সব ঘটনা নিয়ে পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, সামাজিক সালিশ-বৈঠক, আদালতে মামলার ঘটনাও প্রায় ঘটছে। কিন্তু স্বামীকে না জানিয়ে এক বা একাধিক বিয়ে করার ঘটনা তেমন শুনা না গেলেও প্রথম স্বামীকে না জানিয়ে স্ত্রীর এক বা একাধিক বিয়ের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার উত্তর বাইপাস এলাকায়। অভিযুক্ত ওই স্ত্রীর নাম সাবিনা ইয়াসমিন ( ১৯)। সে মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়ার বিনয়ঘর গ্রামের ও লাকসাম পৌরসভার উত্তর বাইপাস এলাকার সাবিনা ম্যানশনের বাসিন্দা মৃত. হাজী আবদুর রশিদের মেয়ে এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার ভোগই গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে আমেরিকা প্রবাসী শাহজাহান হোসেন সজিবের স্ত্রী।
আমেরিকা প্রবাসী শাহজাহান হোসেন সজিবের স্ত্রী মোসাঃ সাবিনা ইয়াসমিন স্বামীর দেয়া গহনা-বিভিন্ন সময় পাঠানো নগদ কয়েক লাখ টাকা নিয়ে স্বামীকে না জানিয়ে অন্যত্র প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তোলে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। কিছুদিন পর প্রেমিক পাশ্বর্বতী নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি পৌরসভার বেপারী পাড়ার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মোজাম্মেলের সাথে বিয়ে হয়।
জানা যায়, বিগত ২০১৫ সালের ৭ আগষ্ট মনোহরগঞ্জ উপজেলার ভোগই গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে আমেরিকা প্রবাসী শাহজাহান হোসেন সজিবের সাথে ফুপাত বোন সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে।
প্রেমের স্বীকৃতি দিতে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ভিড়িও কলের মাধ্যমে সামাজিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ১৫ লাখ টাকা কাবিন, ৬ ভরি র্স্বনের গহনা, বিবিধ খরচ নগদ ২৫ টাকা ধার্য্য করে একটি চুক্তি নামায় উভয় পক্ষের সম্মতি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
বিয়ের পর থেকে আমেরিকা প্রবাসী সজিব স্ত্রীর ভরণ-পোষনের জন্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা পাঠায়। এছাড়াও স্ত্রী সাবিনা কে নিজের কাছে নিতে আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী এক যুবকের সাথে চুক্তির মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু সাবিনা নোয়াখালীর মোজাম্মেলের প্রেমে পড়ে আমেরিকা যাওয়ার কথা অস্বীকার করায় সজিব চুক্তিকৃত ৩০ লাখ টাকা হারায়।
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, প্রথম স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাবস্থায় স্ত্রী যদি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে সেই দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ, অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে। স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে ইচ্ছুক হলে তাঁকে আবশ্যিকভাবে আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে প্রথম স্বামীকে তালাকের নোটিশ প্রদানপূর্বক ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে নির্দিষ্ট ইদ্দতপালন শেষে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করা যেতে পারে। এই বিধান লঙ্ঘন করে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকাবস্থায় স্ত্রী যদি স্বামীর জিম্মা থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন সে ক্ষেত্রে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত স্ত্রী বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন। সঙ্গে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
এছাড়া স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় যাকে বিয়ে করছেন তাঁর কাছে পূর্বের বিয়ের কথা গোপন করেন এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী স্বামী তা জানতে পারেন তাহলে সেটি দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারা অনুসারে একটি অপরাধ। যার ভিত্তিতে অপরাধীকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হবে, সাথে অর্থদণ্ডও প্রযোজ্য হবে।
এছাড়াও অন্যের স্ত্রী জানা সত্ত্বেও কোনো বিবাহিত নারীকে কোনো পুরুষ যদি ফুসলিয়ে বা প্ররোচনার মাধ্যমে যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশে কোথাও নিয়ে যায় বা একই উদ্দেশে কোথাও আটকে রাখে তাহলে সেটি একটি অপরাধ যা দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডনীয়, অথবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
আমেরিকা প্রবাসী সজিব জানায়, আমি সাবিনা কে শরিয়ত সম্মতভাবে বিয়ে করেছি এবং তার চাহিদা তম ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে ভরণ-পোষনের জন্য কয়েক লাখ টাকা দিয়েছি। তাকে আমার কাছে আমেরিকায় আনার জন্য বাংলাদেশী যুবকের সাথে ৩০ লাখ টাকা চুক্তি করেছি। কিন্তু তার কারনে আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমি তার বিচার চাই।
অভিযুক্ত সাবিনার মা সকিনা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার পরিবারের সুনাম নষ্টের জন্য এসব ঘটনা রটানো হচ্ছে। টাকা পাঠানোর ঘটনা মিথ্যা।