বুধবার , ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মামুন নজরুল, মীরসরাইঃ
গত বছরের মতো এবারও শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত, গরীব-দু:খী ও অসহায় পরিবারের মাঝে মাংস বিতরণ করেছেন চট্টগ্রাম মীরসরাইয়ের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরী ।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) শতবর্ষী আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এই মাংস বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এতে অসহায় পরিবারগুলোর যেন আনন্দের সীমা নেই।
উপস্থিত গরীব ও দু:খী মানুষের পাশাপাশি এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরী।
মায়ানী ইউনিয়নের পশ্চিম মায়ানী গ্রামের মৃত আবদুল ওহাবের ছেলে তারেক হোসেন। ১৪ বছর বয়সে নিজের বাবাকে হারিয়েছেন তিনি।
পরিবারের একমাত্র সন্তান তারেক। এখনও তার উপার্জনের সক্ষমতা হয়নি। আশপাশের মানুষ যতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করেন সেগুলো দিয়ে চলে দুই বোন, মা আর নানিকে নিয়ে তাদের সংসার। তারেক হোসেন বলেন, আমরা কখনও কোরবানি দিতে পারিনা। কারণ আমাদের ওইটুকু সামর্থ্য নেই। কোরবানি উপলক্ষে আশপাশের মানুষ যা দেয় সেটুকু খেয়ে আমরা সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কখনও গরুর গোশত কিনে খেতে পারি না।
আজ তারা আমাদের গরুর গোশত, মসলা, আলু, পেঁয়াজ দিয়েছেন। সেগুলো পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে বলে হাসি দেন তারেক হোসেন।
পশ্চিম খৈইয়াচড়া থেকে আসা প্যাডেল চালিত রিক্সা চালক মো. দুলাল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কোন রকম দিনপাতি করছি। গরুর গোশত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই।
গত বছরও এই সংগঠন থেকে একটি গরুর গোশতের প্যাকেট পেয়েছি। এবারও দিয়েছেন। পরিবারে বৌ-বাচ্চা নিয়ে খেতে পারবো।
বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে হিতকরী সংগঠন যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়।
তিনি আরো প্রত্যাশা করেন উক্ত সংগঠনের হাত ধরে এগিয়ে যাবে অত্র এলাকার সুবিধাবঞ্চিত, গরিব-দু:খী অসহায় মানুষগুলো।
গোশত বিতরণ উপ-কমিটির আহবায়ক মামুন নজরুল বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিতকরীর কিছু সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতায় আমরা গত বছরের মতো এবারও শতাধিক পরিবারের মাঝে গরুর গোশত বিতরণ করেছি। অনেকে ২৭ রমজানের আগের রাতে ভালো কিছু রান্না করেন।
কিন্তু সমাজে এমন অনেক পরিবার আছে সারা বছর গরুর গোশত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য থাকে না। তাই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমে কিছু পরিবারে মাঝে তুলে দিয়েছি গরুর গোশত।
এছাড়া মসলা, আলু ও পেয়াজ দেয়া হয়েছে প্রত্যেক প্যাকেটের সাথে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হিতকরী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমাজের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে ‘হিতকরী পাঠগৃহ’, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে ইফতার, আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা,বিভিন্ন দূর্যোগে উদ্ধার ও ত্রানতৎপরতা, মানসিক রোগীদের সেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার, বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠমুখী করতে পুরস্কার প্রদান, ফ্রি কোচিং, কুইজ আয়োজন, গেল করোনা মৌসুমে কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া, প্রতি রমজানে সমাজের অসচ্ছল পরিবারের ঘরে ঘরে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেয়াসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে জনহিতকর এই সংগঠনটি।
শিক্ষার্থীদের এ সংগঠন বর্তমানে দেশ-বিদেশে প্রায় ৩’শ সদস্য নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে।