সোমবার , ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনে চলছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চরপক্ষি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম।
এছাড়াও বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক ও সীমানা প্রাচির না থাকায় রয়েছে নানান সমস্যা। বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের মাঠের এক পাশে পরিত্যাক্ত পুকুর থাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে না সমস্যায়।
এতে করে বিদ্যালয়টিতে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নতুন ভবনের দাবি তুললেও তা এখনও নির্মাণ হয়নি। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে।
জানা যায়, ১৯৩০ সালে রায়পুর উপজেলার উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের পক্ষিরচর গ্রামে চরপক্ষি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৫২ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষানুরাগী জালাল আহাম্মদ হাওলাদার।
২০১০ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেই ভবনেই এখনও চলছে পাঠদান। ৬টি কক্ষ থাকলেও দোতলার ৪টি ঝুকিপুর্ণ ও ক্লাসরুমের সংকট থাকলেও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ভবনের বিভিন্ন দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। এরমধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে।
এছাড়াও জরাজীর্ণ ভবনের তিনটি রুমেও ক্লাস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। অনেক আগেই দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে। বৃষ্টি হলেই কক্ষের মধ্যে পানি পড়ে।
তাছাড়া একটু বাতাস হলেই দরজা ও জানালা আটকানোর ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে সমস্যায় পড়তে হয়। ভবনের নীচতলায় একটি ছোট কক্ষে বসতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের দপ্তরিকেও। ফলে ছোট এই অফিস কক্ষে কোনোরকমে চলছে বিদ্যালয়ের সকল কাজ। এতে প্রধান শিক্ষকসহ সাতজন সহকারী শিক্ষক ও একজন দপ্তরিকে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়।
এছাড়া বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও জরাজীর্ণ। পুরাতন হওয়ায় স্যাঁতস্যাঁতে ও নোংরা পরিবেশেই টয়লেটে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এসব কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ফয়েজ জানায়, কয়েকদিন আগে ভবনের পাশে বসেই আমরা খেলছিলাম। তখন ভবনের পলেস্তারা খসে আমাদের পাশে পড়ে। খুব ভয় পেয়েছিলাম।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা জানায়, তাদের বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা অনেক খারাপ। ভবনের দরজা ও জানালা থাকলেও একটু বৃষ্টি হলে তাদের বই-পত্র ভিজে যায়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান ও শিক্ষিকা শিউলি আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের অবস্থা খুব খারাপ। ভবনটির চাল দিয়ে পানি পড়ে। তাছাড়া দরজা জানালা দিয়েও বৃষ্টির পানি ও বাতাস হলে ক্লাস করাতে সমস্যা হয়। বইপত্র সব ভিজে যায়। ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ।
দেওয়ালে ফাটল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ঝুঁকি নিয়েই শিশুদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। দুইমাস আগে স্কুলের সামনে দিয়ে স্থানীয় এমপি যাওয়ার সময় তাকে স্কুলের অবস্থা দেখাই।
তিনি নতুন একটি ভবন এনে দিবেন বলেও খবর নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভবনের যে অবস্থা তাতে যেকোনো মুহূর্তে ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমি অনুরোধ করবো এই ভবনটি যেন নতুনভাবে করা হয়।
তাছাড়া বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষই জরাজীর্ণ, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্লাস করতে পারছে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক আশা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে, সেখানে এসে যদি কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয় তার দায়ভার কে নেবে ?
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে নতুন ভবন জরুরিভাবে দরকার। স্কুলের মাঠের অবস্থাও ভালো না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে। এ ব্যাপারে “পশ্চিমাঞ্চল পরিবার সচেতন নাগরিক” কমিটির সভাপতি ও শিক্ষানুরাগী তাহসিন হাওলাদার বলেন, মানসম্মত শিক্ষা সেবা নিশ্চিতে পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক পড়াশুনার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
নিরাপদ খেলার মাঠ, খেলাধুলার উপকরণ, ওয়াশব্লক, পর্যাপ্ত সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, ইত্যাদি গুণগত শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম। তাই এখানে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত একটি নতুন ভবনসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
রায়পুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, মানসম্মত শিক্ষা সেবা নিশ্চিতকরণে সরকার ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষের রয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ।
এ বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। তাই সম্প্রতি এর মেরামতের জন্য দুই লক্ষ টাকাও দেয়া হবে। নতুন ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।