বৃহস্পতিবার , ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউপির বেরিবাঁধ ও ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ খালের পাশে নতুন কাঁচা রাস্তা হবে। তাই ৩০ বছরে পুরনো কাঁচা রাস্তাটি সংস্কার না করে স্থানীয়দের অনুমতি না নিয়েই সহস্রাধিক সুপারি ও বিভিন্ন ফলের গাছ কেটে নতুন করে আরেকটি কাঁচা রাস্তা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে।
গাছগুলো লাগিয়েছিলেন রাস্তার পাশের জমির দশ মালিক (কৃষক- দিনমজুর পরিবার)। এনিয়ে ইউএনও অনজন দাশ এবং পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাফর মোঃ সালেহের ( মিন্টু ফরায়েজি) অভিযোগ দিলে তারা কোন ব্যাবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা।
স্থানীয় শামসুদ্দিন, সাইজুদ্দিন ও মোহাম্মদ উল্লাহাক ৬ জন কৃষক জানান, দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সমিতির বাজারের পশ্চিমে নতুন ব্রীজের সামনে থেকে বটতুলি যাওয়ার কাঁচা রাস্তার (মেঘনার বেরিবাঁধ- ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ খাল পাড়) দুই পাশের জমির মালিকরা (কৃষক-দিনমজুর) স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের বাড়ীর সামনে বিভিন্ন প্রজাতির ২ হাজার ফলজ ও বনদগাছ লাগান।
নতুন রাস্তায় করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ৪০ দিনের কর্মসূচির প্রকল্প দেওয়া হয়। প্রকল্পটির সভাপতি ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন মেম্বার।
প্রকল্পটির পাশেই তার কেনা সম্পদও রয়েছে। কিন্তু দ্বাদস সংসদ নির্বাচনের কারনে প্রকল্পের সকল কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দশ বছররের পুরোনো কাঁচা রাস্তাটি সংস্কার না করেই তার পাশে নতুন করে আরেকটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণের নামে ইউপি সদস্য আবুল হোসেন তার অনুসারী লোকদদের নিয়ে এসে শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু মেশিন দিয়ে রাস্তার ২ পাশের ৬ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের প্রায় সহস্রাধিক গাছ কেটে দেয়।
স্থানীয় কৃষক ও চা দোকানদার মোহাম্মদ উল্লাহ (৫০) বলেন, ‘কাঁচা রাস্তাটি আমাদের জমির ওপর দিয়ে করা হয়।
রাস্তার ২ পাশের ৮০টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আমার পাশে বসবাসকারি ইসমাইল রাড়ীরও (৭০) ১০০ টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সরকারের নাম করে অবৈধভাবে জোরপূর্বক রাস্তার ১০০০টি গাছ কেটে দেন ইউপি সদস্য। আমরা কয়েকজন প্রতিবাদ করলে তিনি আমাদের ভয় দেখান।’
স্থানীয় গৃহবধু ফেন্সি বেগম (৪৮) বলেন, ‘রাস্তার পাশে সুপারি, আম, কাঁঠাল ও মেহগনি মিলিয়ে ৩০০টি গাছ নিয়ে আমার বাগান । গাছগুলো কেটে পুরোনো রাস্তা ও ব্রীজের সাথে সংযোগ করবে।
সরকার বলেছে রাস্তা করতে, এ দাবি করে ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বেকু মেশিন নিয়ে এসে নতুন রাস্তার কাজ করা শুরু করেছেন। আমরা কয়েকজন বাঁধা দেয়ায় কাজ বন্ধ রেখে চলে গেছেন।’ সে এই জায়গার পাশে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে জমির ব্যাবসা করেন।
রাস্তাটি করা হলে জমির দামও বৃদ্ধি পাবে।এই মতলবে গাছকেটে রাস্তা। অথচ ‘ আমার বাড়ীর সামনের দশ বছরের পুরনো রাস্তা করতে আমরাই জমি দিয়েছি,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে গাছ লাগালাম আর ইউপি সদস্য জোর করে কেটে নিয়ে যাবে তা করতে দেয়া হবেনা।’
অভিযুক্ত দক্ষিন চরবংশীর ৬নং ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বলেন, ‘ মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর বেরিবাঁধের পাশের খাল পাড়ের ওই স্থানে ১০ পরিবার বসবাস করে। নতুন করে ১০ ফুটের কাঁচা রাস্তা করতে গাছ তো কাটতে হবে, তাই তিন শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়।
পুরনো কাঁচা রাস্তাটি সংস্কার না করে তার পাশেই আরেকটি নতুন কাঁচা রাস্তা করতে হবে কেন-? কৃষকের গাছগুলো কেন কাটতে হলো?—মেম্বার বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই গাছ কেটে মতুন রাস্তা করছি।’ এখন কর্মকর্তা বলছেন সব প্রকল্পের কাজ স্থগিত। তাই নীজের উদ্যোগে রাস্তা করি।
এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অন্জন দাশ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশিকুর রহমান ও দক্ষিন চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মোঃ সালেহ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কারনে সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারে র্যাবের অভিযানে ৩ মাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার