সোমবার , ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুরঃ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মিত তিনটি মার্কেট ব্যবস্থাপনায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা দিয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে দেখভাল করার কথা থাকলেও কার তত্ত্বাবধানে এগুলো চলছে, কেউ নিশ্চিত করে জানেন না।
এ সুযোগে নারীদের মার্কেটগুলো পুরুষের দখলে চলে গেছে। নারীদের তৈরি কুটিরশিল্পের পণ্যসামগ্রী নারীদের দিয়েই বিপণন ও প্রদর্শন এবং তাঁদের স্ব-উদ্যোগী করার লক্ষ্যে সরকার এসব নারী মার্কেট নির্মাণ করে। অথচ অব্যবস্থাপনার কারণে প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পূর্বাঞ্চলীয় পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালের প্রথম দিকে এগুলো নির্মিত হয়।
প্রাপ্ত ভাড়ার ৫ শতাংশ ভূমি রাজস্ব খাতে, ১৫ শতাংশ মার্কেটের রক্ষণাবেক্ষণে এবং ৮০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ইউপির তহবিলে জমা হওয়ার কথা। শুধু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের হায়দরগঞ্জ বাজার ও উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট ও বাবুরহাট বাজারে তিনটি মার্কেট চালু করা হয়।
হায়দরগঞ্জের মার্কেটে শাহিদা বেগম, ফরিদা বেগম, তাছলিমা বেগম, পারভিন বেগম ও দেলোয়ারা বেগমের নামে ৫টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা কখনো নিজেরা ব্যবসা করেননি।
দোকান প্রতি বছরে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছেন রাশেদ ব্যাপারী, ইকবাল হোসেন, রাকিব পাটওয়ারী ও মুরাদ হোসেনের কাছে। তাঁরা সেখানে শাকসবজি, হোটেল ও ক্রোকারিজের ব্যবসা করছেন।
মার্কেটটি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে উপজেলা প্রকৌশলী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি চুক্তিনামা করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৪ দশমিক ৫৮ টাকা। বরাদ্দপ্রাপ্তরা কখনো দোকানের মালিকানা দাবি ও হস্তান্তর বা সাবলিজ দিতে পারবেন না।
নারী নিজে অথবা পরিবারের কোনো নারী সদস্য বা নারী কর্মচারী দিয়ে দোকান পরিচালনা করবেন। কোনো অবস্থাতেই আত্মীয় বা অনাত্মীয় পুরুষ লোককে দোকানের বিক্রেতা বা পরিচালনায় নিযুক্ত করতে পারবেন না।
৫ বছর মেয়াদি চুক্তিপত্রটি আর নবায়নও করা হয়নি। বরাদ্দপ্রাপ্তরা কেউ দোকানের নির্ধারিত ভাড়া ইউনিয়ন পরিষদকেও পরিশোধ করেননি। দোকান বরাদ্দ পাওয়া তাছলিমা বেগম জানান, ‘আমরা মহিলা হওয়ায় বাজারে বসে ব্যবসা করা সম্ভব নয়।
তাই আমাদের নামে দেওয়া দোকানগুলো পুরুষদের কাছে ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। একবার চুক্তিপত্রও দেওয়া হয়েছে।
ইউপিতে কয়েকবার ভাড়ার টাকা দিয়েছি। এখন আর ভাড়া দেই না।’ এদিকে খাসেরহাট ও বাবুরহাট বাজারের দোকানগুলো নির্মাণের প্রায় ১৬ বছর হতে চললেও এগুলো এখনো কারও নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
খাসেরহাট মার্কেটটিতে ব্যবসা পরিচালনা করছেন শহিদুল ইসলাম নামের একজন। তিনি স্থানীয় রুহুল আমিন খলিফা, মফিজুর রহমান খান, নাজিবুল্লাহ ছৈয়াল ও আবুল কালামের কাছ থেকে ঘরগুলো ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন বলে দাবি করেন।
সরকারি বরাদ্দ নেওয়ার কাগজ বা কোনো ভাড়া চুক্তিনামা তিনি দেখাতে পারেননি।
উত্তর চরবংশী ইউপির চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন হাওলাদার ও উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ দুলাল হাওলাদার বলেন, মার্কেটগুলো ইউপির তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং পরিষদ ভাড়া নেবে এমন বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। এগুলো কেউ জবরদখল করে থাকতে পারবেন না। দ্রুত এগুলোর একটি ব্যাবস্থা করা হবে।
উপজেলা হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এলজিইডির রায়পুর প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সুমন মুন্সি বলেন, ‘নির্মাণের পর এগুলো হস্তান্তর করে দেওয়ায় এখন কোনো দায়িত্বে নেই আমাদের। হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি দেখভাল করে থাকেন।’