বুধবার , ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এম.এ মান্নান, লাকসামঃ
ঈদ মানে আনন্দ। তবে এ আনন্দ সবার মনে দোলা দেয় না। সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষ সব সময়ই থেকে যায় উৎসব আনন্দের বাইরে। যাদের আমরা ছিন্নমূল বলে চিনি।
লাকসাম শহরজুড়ে সরোবরে প্রতিদিন দেখা মেলে নাম না জানা অনেক ছিন্নমূল পথশিশুর। সুবিধা বঞ্চিত এই শিশুদের ভবিষ্যৎ যেমন অনিশ্চিত।
একইভাবে নিশ্চয়তা নেই দুবেলা পেট ভরে খাওয়ার। আর বিরিয়ানি, পোলাও, মাংস তাদের কাছে বেশ কাল্পনিক।তারা যে সমাজের একটি অংশ, সমাজের মানুষের একটু সহযোগিতায় তারা হয়ত সুন্দর জীবন পেতে পারত তা নিয়েও ভাবেন অনেকেই।কেবল মুখ চেনা এই ছিন্নমূল শিশুগুলোর সাথে বেশ পরিচিত লাকসামের বাসিন্দা সোহেলের।
তবে এবার রমজান মাস জুড়ে ওই সব ছিন্নমূল মানুষের পাশে এসে ব্যতিক্রমভাবে এমন এক উদ্যোগ নিয়েছেন লাকসাম পৌরসভার যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক ও ৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান সোহেল।
তিনি পুরো রমজান মাসে জুড়ে সড়কের পাশে ইফতার সামগ্রী বিতরণীর পাশাপাশি বিভিন্ন সড়ক, রেলওয়ে জংশন স্টেশন অথবা হাসপাতালে থাকা ছিন্নমূল মানুষকে রাতের সেহেরী বিতরণ করে সবার মুখে খুব আলোচিত হয়েছেন মাহমুদুর রহমান সোহেল।
তার সঙ্গে এমন মানবিক কাজে সহযোগিতায় থাকেন তার কয়েকজন সহযোদ্ধারা।
এছাড়াও ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখা গেল সোহেলকে।
তিনি নিজ এলাকায় স্বজনদের সঙ্গে সময় না দিয়ে লাকসাম রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ছিন্নমূল মানুষকে নিয়ে দিনভর আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে ঈদের দিনটি উদযাপন করেছেন সোহেল।
সোমবার (৩১ মার্চ ) ঈদের নামাজ শেষ করেই সোহেল চলে যান লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকায়। সেখানে তিনি আগেই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন ১৩০ জন ছিন্নমূল মানুষের জন্য দুপুরের খাবারের। তাতে ছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট আর গরুর মাংস। ছিন্নমূলদের সাথে খেলেন এবং তাদের মুখে তুলে খাওয়ালেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, খাওয়া দাওয়া শেষে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন খেলাধুলার। যেখানে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতে বাবা-মা হীন এই কোমলমতি শিশুরা। পরে তাদেরকে পড়িয়ে দেওয়া হয় নতুন পোশাক।
অসহায় বারেক ও পথশিশু রাসেল বলেন, ‘ভাই তো মাঝে মধ্যেই আসে। যহন আসে খাওন নিয়া আহে। ভাই রমজানের পুরো মাস জুড়ে রোজাদার ব্যক্তিদেরকে ইফতার করিয়াছেন। তিনি নিজ হাতে আমগোরে খানা (খাবার) খাইয়াছেন। আমাগো খুব আদর করে, সোহেল ভাই খুব ভালো মানুষ।’
মাহমুদুর রহমান সোহেল যুগান্তরকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আমি পুরো রমজান মাস জুড়ে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছি। এছাড়াও সড়ক, জংশন স্টেশন, হাসপাতাল এবং বিভিন্ন এলাকায় ছিন্নমূল অসহায় মানুষকে রাত্রে সেহেরী খাবার ও সেমাই চিনি পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ হিসেবে আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমি সে দৃষ্টিকোণ থেকে মাঝেমধ্যে ওদের সাথে খাওয়া দাওয়া করতে আসি।’
সোহেল আরো বলেন, ‘এরা সুবিধা বঞ্চিত না, এরা আমাদের দৃষ্টি বঞ্চিত। আমরা এদের দিকে দৃষ্টি দিলেই এরা একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে। আমার এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমি আমার অনেক কাছের মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। তাদের সহযোগিতাই আমাকে আরো উদ্বুদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যাদের বাবা-মা কিংবা পরিবার রয়েছে তারা ঈদে তাদের কাছেই ছুটে যাই। স্বজন-বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে দিন কাটাই। কিন্তু এই ছিন্নমূল মানুষদের শিশুদের এখানেই পড়ে থাকতে হয়, তারা বঞ্চিত হয় ঈদের আনন্দ থেকে। এই ভাবনা থেকেই তাদের সঙ্গে নিয়ে এবারের ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যেই আমার এই ক্ষুদ্র আয়োজন। যেন তারা পরিপূর্ণভাবে ঈদের আনন্দ খুঁজে পায়।