সিএনজির সঙ্গে ধাক্কা তর্কের
জেরে চালককে পিটিয়ে হত্যা !
লালমাই প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওমর ফারুক মজুমদার (৪৫) নামে এক সিএনজি চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমাই উপজেলার ফয়েজগঞ্জে অবস্হিত এমআর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত ওমর ফারুক নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের লুধুয়া এলাকার বাসিন্দা।
তিনি সকাল ১০টার পর সিএনজিতে গ্যাস নিতে ফয়েজগঞ্জ গ্যাস পাম্পে যান। গ্যাস নেওয়ার সময় গাড়ি ঘুরানোর সময় তার সিএনজির সঙ্গে একটি অটোরিকশার সামান্য ধাক্কা লাগে। এতে দুই চালকের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
একপর্যায়ে অটোরিকশা চালক উত্তেজিত হয়ে স্থানীয় লোকজনকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন।
এরপর একদল যুবক এসে ওমর ফারুককে মারধর শুরু করে। তারা লাঠি, ইট ও হাতুড়ি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। বেধড়ক মারধরের একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে লাকসামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে পথেই তিনি মারা যান।
ওমর ফারুকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার পরিবার, স্বজন ও সহকর্মী চালকরা ফুঁসে ওঠেন। তারা কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
প্রতিবাদকারীরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
লাকসাম হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দুই চালকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এক পক্ষের লোকজন এসে ওমর ফারুককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, যা তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
লালমাই থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, রাত ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছে।
নিহত ওমর ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবার শোকে স্তব্ধ। স্ত্রী ও তিন সন্তানের আহাজারিতে পুরো এলাকা ভারী হয়ে উঠেছে।
নিহতের বড় ছেলে মো. সালমান (১৪) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, আমার বাবা নিরীহ মানুষ ছিলেন। তিনি কারও সঙ্গে ঝগড়া করতেন না। কেন তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো ?
নিহতের খালাতো ভাই বাকের মজুমদার বলেন, শুক্রবার দুপুরে ওমর ফারুক গ্যাস নিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই অন্য এক চালকের সঙ্গে তার তর্ক হয়। পরে তারা দলবেঁধে তাকে আক্রমণ করে। আমরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, ওমর ফারুক একজন সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে এ ধরনের নির্মম ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনুক।
এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে নিহতের পরিবার ও স্বজনরা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পুলিশ বলেছে, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের ভিত্তিতে দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
তুচ্ছ ঘটনায় এভাবে একজন সিএনজি চালকের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও দোষীদের গ্রেপ্তার না হলে এলাকাবাসী আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। নিহতের পরিবার এখন শুধু ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।
https://www.songbadtoday.com/%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%87%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a6%bf/
Post Views: ৪৪