বুধবার , ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
দীর্ঘ ১৫ বছর পর লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। ৬ জানুয়ারী পৌর আওয়ামীলীগ সম্মেলনকে ঘিরে আঞ্চলিক মহা-সড়কে টানানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। তাতে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নেতাদের ছবি।
এবার ২৪৬ কাউন্সিলরের মাধ্যমে দলে স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন নেতাকর্মীরা। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন আশা দলের সিনিয়র নেতাদের। সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পৌরশহরের পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে। সম্মেলনে- কে হচ্ছেন সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক- এ প্রশ্নকে ঘিরেই সবার আগ্রহ আগামী ৬ জানুয়ারীর দিকে। গত সোমবার রায়পুর পৌর শহরে আ’লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে সম্মেলন নিয়ে প্রস্তুতিসভা করা হয়েছে। বিতর্কিত ব্যাক্তিদের নাম বাদ দিয়ে রোববার (২ জানুয়ারী) রাতে সভার মাধ্যমে নয়টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদকদের হাতে ২০৬ জন কাউন্সিলরদের নামের তালিকা তুলে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় রাজপথ দখলসহ রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে দলটি।
তবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছিলো দলে। তবে তাদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৌর আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে সেই নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। উল্লেখ্য- ২০০৩ সালের মার্চের শেষের দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি করা হলেও ৬/৭ বার সম্মেলনের তারিখ পেছানো হয়। ২০০৬ সালের ২৬ এপ্রিল সম্মেলনের মাধ্যমে মরহুম কামাল উদ্দিন ভুঁইয়াকে সভাপতি করে পুর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষে কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহকে আহবায়ক ও আইনুল কবির মনিরকে যুগ্মআহবায়ক করে ২৭ সদস্যের আহবায়ক কমিটি দেন ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর।
৬ জানুয়ারী নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। অপরদিকে, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারী উপজেলা সম্মেলনের জন্যে প্রস্তুতি চলছে বলে জানাযায়।। সম্মেলন উদ্ভোধন করবেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আলহ্বাজ হারুনুর রশিদ। বিশেষ অতিথি জেলা আ’লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন জেলার সাধারন সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুরের সাংসদ এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন।
বিশেষ বক্তা হিসেবে থাকবেন, জেলার যুগ্মসাধারন সম্পাদক এডঃ আবদুল মান্নান মুন্সি, এসেনসিয়াল ড্রাগসের পরিচালক ডাক্তার এহসানুল কবির জগলুল ও সাবেক ক্রেন্দ্রীয় যুব নেতা শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, হাজি ইসমাইল খোকন ও এডঃ মিজানুর রহমান উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ । পৌর আওয়ামীলীগের আহবায়ক কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ বলেন, ‘এক বাড়িতে ৩-৪ জন যোগ্য লোক থাকলে তারা কাউন্সিলর হতেই পারেন। এটি দোষের কিছু না।’
বিএনপি-জামায়াত বা অন্যদলের কোন কর্মীকে কাউন্সিলর বানানো সুযোগ নাই। কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। এবারের সম্মেলনে দুইজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ জন মোট ৮ জন ও সাংগঠনিক পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা নির্বাচিত হতে কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তবে,সভাপতি পদের জন্য কর্মীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন, পৌর আ’লীগের আহবায়ক কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ এবং সাধারন সম্পাদক পদে প্রার্থী-পৌর আ’লীগের যুগ্মআহবায়ক আইনুল কবির মনির ও আ’লীগের সদস্য ও তরুন সমাজ সেবক আবু সাঈদ জুটন।
এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন নেতৃত্ব আসা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এ পদেও যোগ্য এবং ত্যাগী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ভালো সাড়া পাচ্ছেন আইনুল কবির মনির ও আবু সাঈদ ঝুটন। দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হলেও আহবায়ক বাকি বিল্লাহর নেতৃত্বে এই পৌরসভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ভালোই চলছিলো। জাতীয়, বিশেষ দিবস, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোও পালন করা হয়েছে।। এছাড়া দীর্ঘদিন মূল দলের সম্মেলন না হওয়ায় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও নাই, কার্যক্রমও অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। তবে, এবারের ৬ জানুয়ারী সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিচ্ছে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।