শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চট্রগ্রামে বদলি-অস্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা

পরিশোধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন 

মোঃ শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রামঃ

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলের বদলি-অস্থায়ী শ্রমিকদের সমস্ত পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পাটকল চালা সহ ৩ দফা দাবিতে আমিন জুট মিলস্, দক্ষিণ গেইট প্রাঙ্গণে ১৬জুন সকাল ১১ টায় পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন, অ্যাডভোকেট আমির আব্বাস তাপু, সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য পাঠ করেন কামাল উদ্দিন, বক্তব্য রাখেন সত্যজিৎ বিশ্বাস ও আমিন জুট মিলস সিবিএ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক। রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক একসাথে কর্মহীন হয়ে পড়ে। সে সময় প্রায় দুই মাসের মধ্যে সকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু করার ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ১ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও সরকার দু’ নামের জটিলতা, কাঁচা ঘরের ভাড়া জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে এখনো স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম সম্পূর্ন করতে পারেনি। বদলি ও অস্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা এখনো শুরুই করা হয়নি।

কবে নাগাদ পরিশোধ করা হবে তার সুনিদিষ্ট সময় এখনও জানাতে ব্যর্থ পারেনি মিল কর্তৃপক্ষ তথা বিজেএমসি ও পাটমন্ত্রী।

বিশেষ করে এই একবছরে বদলি শ্রমিকেরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এদের অধিকাংশ বেকার, যারা বাসা ভাড়া যোগাড় করতে পারছে না, না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় অর্থাভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত। চরম হতাশায় এই শ্রমিকেরা দিন পার করছে। পাটকল চালুসহ পাওনা পরিশোধের দাবিতে গত একবছর ধরে মানব বন্ধন, শ্রমিক সমাবেশ, বিজেএমসি কার্যালয় ঘেরাওসহ আমরা বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেছি। কিন্তু আজও কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি। এই অবস্থায় শ্রমিকদের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের লোকসানের দেখিয়ে পাটকলগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এর সরাসরি ভূক্তভোগী শ্রমিকেরা। কিন্তু কাদের দোষে, কি কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানি হলো তা বের করার জন্য সরকার কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

লোকসানের কারণ হিসাবে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, পাট ক্রয়ে সিন্ডিকেটের প্রভাব, আধুনিকায়নে গাফিলতি, বাজারজাতকরণে উদ্যোগের অভাব এগুলোকে চিহ্নিত করা হলেও এই ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সরকারের ভুলনীতি এবং বিজেএমসি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় শ্রমিকরা কেন বহন করবে? এক সময় পাটকলগুলো লাভজনক ছিল, অথচ গত বিশ- পঁচিশ বছর ধরে বিজেএমসির কর্মকতাদের দুর্নীতি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হলে এই পাটকলের লোকসানের কারণ বেরিয়ে আসবে। বিশ্বব্যাপী এবং দেশের বাজারে পাটের বহুমুখী চাহিদা প্রেক্ষিতে সরকারি উদ্যোগে পাটকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব।

ম্যানডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছিল পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পাটের ব্যবহার যাতে বাড়ানো যায়। চাল, গম, আটা, চিনিসহ ১৮টি পণ্যের মোড়ক ব্যবহারে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আদেশ জারি হয়েছিল। এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশের বাজারে পাটের বিপুল চাহিদার সৃষ্টি হওয়ার কথা। ইউরোপে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এর বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ ও পাটজাত মোড়কের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকার বন্ধের সময় ঘোষণা করেছিল, আধুনিকায়ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাটকল চালু করা হবে। ইতোমধ্যে পত্রিকা মারফত আমরা জেনেছি যে, বিজেএমসিকে তদারকি সংস্থায় রূপান্তর করে, পাটকলগুলো ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে বিজেএমসির মাথাভারী প্রশাসন সরকারের শ্বেতহস্তীর মতো পুষতে হবে; অন্যদিকে মিলগুলো বেসরকারি মালিকদের লুন্ঠনের জায়গায় পরিণত হবে। তাই বেসরকারীকরণ নয়, বরং দেশের বিশেষজ্ঞ, শ্রমিক সংগঠন, বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন ও দুর্নীতি টিকিয়ে রাখার জন্য যে চক্র ক্রিয়াশীল হয়ে বছর বছর লোকসানের পরিস্থিতি তৈরি করছে, তাকে সমূলে নির্মূল করার মধ্যে দিয়েই পাটকলসমূহ চালু করার দাবি জানাই।

উপরোল্লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার আহ্ববান জানায়। ১/বদলি – অস্থায়ী শ্রমিকদের বকেয়া সকল পাওনা অনতিবিলম্বে পরিশোধ কর।২/ ২০১৯ সালের সাপ্তাহিক পাওনা ও মিল বন্ধের নোটিশ পে-মজুরি অতিদ্রুত পরিশোধ কর। ৩/বন্ধ সকল পাটকল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চালু কর। কর্মসূচী- আগামী ২৪ জুন আমিনজুট মিলের সামনে অবস্থান ধর্মঘট।২৮ জুন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ।৩০ জুন ঢাকায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা।