শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রামঃ
হতদরিদ্র বাবা-মা জানে না ছেলে শাহ আলম এখন কোথায়। নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্য ‘উধাও’ হওয়া একজন শাহ আলম।
তিনি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বৈদ্দেরখীল গ্রামের শাহজাহানের ছেলে। তাঁর উধাও হওয়ার বিষয়টি মিডিয়াতে আসার আগে এলাকাতে জানাজানি হয়েছিল।
শনিবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শাহ আলমের বাবা-মা। তাদের প্রশ্ন-এত নিরাপত্তার মধ্যেও শাহ আলম কিভাবে নিরুদ্দেশ হলো? জনপ্রতিনিধিদের আশাবাদ-শাহ আলম আবারও দেশে ফিরে এসে আত্মসমর্পন করে বিশ্বে দেশের ভাবমূতি ফিরিয়ে আনবে।
শনিবার বিকেলে সরেজমিন শাহ আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে নড়বড়ে থাকার দুইটি ঘর। তাঁর বাবা শাহজাহান রিকশা চালানো শেষে বাড়ি ফিরেছেন। একটি ঘরে গিয়ে গরুর পরিচর্যা করছেন তিনি। মা শিরিনা বেগম গরুর জন্য ভাতের মাড় আনতে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন। কথা হয় শাহ আলমের বাবা শাহজাহানের সাথে।
ছেলে শাহ আলম কোথায় জানতে চাইলে আতঙ্কিত হয়ে বলেন, আমার ছেলে বর্তমানে আছে আমি জানি না।
নেদারল্যান্ডসে যাওয়ার আগে বলে গেছে, প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে যাচ্ছে। তারপর থেকে আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। গত তিন-চার দিন আগে বাড়িতে পুলিশ এসে শাহ আলমের খোঁজ করলে আমরা বলি, সে তো প্রশিক্ষণে নেদারল্যান্ডসে গেছে। তারাই বলে, শাহ আলম সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।
এরপর থেকে প্রশাসন আমাদের প্রতি কড়া নজরদারি রেখেছে। বার বার থানায় ডেকে নেয়া হচ্ছে। রেখে দিয়েছে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও শাহ আলম কি করে সেখান থেকে পালিয়ে এ প্রশ্নের উত্তর তারা না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে চাপে রেখেছে।
শাহ আলমের মা শিরিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যাওয়ার আগে বলে গেছে, উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যাচ্ছি। তারপর থেকে আমার ছেলের সাথে যোগাযোগ নেই। পুলিশ বলছে, আমার ছেলে সেখান থেকে নাকি পালিয়ে গেছে। সে কোথায় আছে, কিভাবে আছে-আমরা কিছুই জানি না।
৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম শাহীন বলেন, ২০১৬ সালে শাহ আলম যখন পুলিশ সদস্য হিসেবে যোগদানের প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়, তখন আমরা তার চাকরির ব্যাপারে সুপারিশ করেছিলাম। কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই পুলিশ সদস্য হিসেবে সে যোগদান করে।
পুলিশের ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণের জন্য সে নেদারল্যান্ডস গিয়েছিল-এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয় ছিল। সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি আশা করি-সে তার ভুল বুঝতে পেরে হয়তো দেশে ফিরে আসবে।
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র জিএম মীর হোসেন মীরু বলেন, শাহ আলম নেদারল্যান্ডস থেকে পালিয়ে গিয়ে বিশে^র দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। আমি আশা করব-সে তার ভুল বুঝতে পারবে এবং দেশে ফিরে আত্মসমর্পন করে পুনরায় পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করবে। এতে করে কিছুটা হলেও বিশে^র দরবারে বাংলাদেশের সম্মান বাড়বে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলম নেদারল্যান্ডস্ থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ফ্রান্সে অবস্থান করছে। এ ধরনের গুঞ্জন তাঁর বন্ধু-বান্ধবসহ এলাকায় এর আগে থেকেই প্রচার হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে এনিয়ে কেউ আর মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘মৌখিকভাবে শাহ আলমের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এর বাইরে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে শাহ আলমসহ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের(সিএমপি) ৮ সদস্য ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণের জন্য নেদারল্যান্ডস গিয়ে ছিল। এরমধ্যে ৬জন গত ২৪ মে দেশে ফেরত আসলেও শাহ আলম ও কক্সবাজারে রাসেল চন্দ্র দে নামে দুইজন ফেরত আসে নি। তারা দেশে ফেরার আগের দিন কৌশলে হোটেল থেকে পালিয়ে যায়।